জিন আল্লাহ তায়ালার মাখলুক। তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। মানুষের পূর্বে জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
وَالۡجَآنَّ خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ
আর আমি ইতিপূর্বে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি। লু হাওয়া বিশিষ্ট অগ্নিশিখা থেকে।1
মানুষ জিনদের আসল আকৃতি দেখতে পায় না।
اِنَّہٗ یَرٰىکُمۡ ہُوَ وَقَبِیۡلُہٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَہُمۡ ؕ
শয়তান ও তার দল এমন স্থান থেকে তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না।2
এই আয়াতের আলোকে ইমাম শাফেয়ি রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি জিন দেখার দাবি করে আমরা তার প্রত্যক্ষভাবে দেখার দাবি মিথ্যা মনে করি।3
জিনও মানুষের মতো শরীয়তের মুকাল্লাফ। এবং হাশরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদের জন্যও জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা হবে। ইরশাদ হয়েছে -
یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ اَلَمۡ یَاۡتِکُمۡ رُسُلٌ مِّنۡکُمۡ یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ وَیُنۡذِرُوۡنَکُمۡ لِقَآءَ یَوۡمِکُمۡ ہٰذَا ؕ قَالُوۡا شَہِدۡنَا عَلٰۤی اَنۡفُسِنَا وَغَرَّتۡہُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَشَہِدُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ اَنَّہُمۡ کَانُوۡا کٰفِرِیۡنَ
আমি তাদেরকে বলব, ‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায় ! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের নিকট আসে নাই-যারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট বর্ননা করত আর তোমাদেরকে এই দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত ?’ তারা বলবে, ‘আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’(অর্থাৎ, সত্যিই আমাদের কাছে নবী-রাসূল এসেছিলেন, কিন্তু আমরা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম)। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্যও দিবে যে, তারা কাফির ছিল।4
বনী আদমের সাথে জিন শয়তানদের শত্রুতা আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। তারা বনী আদমকে বিপথগামী করে তাদের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চায়।
إِنَّ ٱلشَّیۡطَـٰنَ كَانَ لِلۡإِنسَـٰنِ عَدُوࣰّا مُّبِینࣰا
নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।5
إِنَّ ٱلشَّیۡطَـٰنَ لَكُمۡ عَدُوࣱّ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا یَدۡعُوا۟ حِزۡبَهُۥ لِیَكُونُوا۟ مِنۡ أَصۡحَـٰبِ ٱلسَّعِیرِ
শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।6
বনী আদম কে ক্ষতিসাধন ও বিপথগামী করতে জিন-শয়তানরা কি কি পন্থা অবলম্বন করে? কুরআন ও হাদিসে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এখানে অল্প কিছু তুলে ধরা হলো।
শয়তানের শত্রুতার কোন সীমা নেই, সে লোকেদের সাথে তাদের খাবার, পানীয় এবং বিয়েতে অংশ নেয়।
وَاسۡتَفۡزِزۡ مَنِ اسۡتَطَعۡتَ مِنۡہُمۡ بِصَوۡتِکَ وَاَجۡلِبۡ عَلَیۡہِمۡ بِخَیۡلِکَ وَرَجِلِکَ وَشَارِکۡہُمۡ فِی الۡاَمۡوَالِ وَالۡاَوۡلَادِ وَعِدۡہُمۡ ؕ وَمَا یَعِدُہُمُ الشَّیۡطٰنُ اِلَّا غُرُوۡرًا
তুই তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস বিপথগামী কর। নিজের আওয়ায দ্বারা, নিজের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না।7
এমনকি শয়তান মানুষের চিন্তায়, শরীরে, পানাহারে, সম্পদ, সন্তানাদি, ঘুমের সময়, স্বপ্নে, ইবাদাতে এবং যেকোন অবস্থায় যে কোন ভাবে ক্ষতি করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন -
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأْنِهِ
শয়তান তোমাদের যেকোনো অবস্থায় উপস্থিত হতে পারে।8
রাসূল সাঃ আরো বলেছেন,
يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ
তোমাদের কেউ যখন ঘুমায় তখন শয়তান তার মাথার পিছনে তিনটি গিট দেয়।9
জিন শয়তানরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করে।
الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ
কখনো শরীরে গোপনে অবস্থান করে। কখনো আবার প্রকাশ্যে ভর করে ক্ষতি করে।10
ٱلَّذِینَ یَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰا۟ لَا یَقُومُونَ إلّا كَما يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطانُ مِنَ المَسِّ
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাওকানী রহঃ সহ আরো অনেক মুফাসসিরীন দাবি করেছেন, যে মাটিতে লুটিয়ে পড়া জিনের কারণে হয়ে থাকে।11 (অর্থাৎ জিন কারো শরীরে ভর করলে বা ছেড়ে গেলে এরকমটি ঘটে থাকে)
জিন মানুষের সামনে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে আসে। এবং ক্ষতি করে বা ভয় দেখায়। যেমন - উমর রাঃ এর এক জিনের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। উমর রাঃ তাকে মাটিতে ফেলে ধরাশায়ী করেন। জিনটি একটি হাদিস বর্ণনার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু ছেড়ে দিলে আর বলে না। এভাবে তৃতীয়বার ধরার পর উমর রাঃ বলেন, হাদিস বর্ণনা ছাড়া তোমাকে আর ছাড়ব না। ফলে সে একটি হাদিস বর্ণনা করে।12
সূরা হিজর - ২৭
আল আ'রাফ - ২৭
আকামুল মারজান ফি আহকামিল জান - পৃষ্ঠা ২৩
আল আনআম - ১৩০
সূরা বনী ইসরাইল - ৫৩
সূরা ফাতির - ৬
সূরা ইসরা - ৬৪
رواه مسلم
أخرجه البخاري في "صحيحه"، كتاب : بدء الخلق باب صفة إبليس وجنوده (4/ 122) رقم (3269)
সূরা নাস
তাফসিরে শাওকানী।
مكايد الشيطان لابن ابي الدنيا - ٤٢